তাজা খবর:
Home / আমাদের ধর্ম / নবীজি সা.-এর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য যেমন ছিল
নবীজি সা.-এর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য যেমন ছিল

নবীজি সা.-এর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য যেমন ছিল

ধর্ম ডেস্ক:

প্রিয় নবী। শেষ নবী। শ্রেষ্ঠ নবী, মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম। তার দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই। অনুপম চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন, ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। -(সুরা কলাম, আয়াত, ৪)। রাসুল সা. ইরশাদ করেন. আমি প্রেরিত হয়েছি উচ্চ নৈতিকতা সমৃদ্ধ আখলাক পূর্ণ করার জন্য। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক) 

রাসুল সা. এর উত্তম চরিত্রের কিছু বাস্তব দৃষ্টান্ত

হজরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, একবার হুজুর সা. তার কোন এক স্ত্রীর ঘরে ছিলেন। এমন সময় অন্য আরেক স্ত্রী রাসুল সা. এর জন্য কিছু খাবার পাঠালেন। খাদেম খাবারের পাত্র হাতে নিয়ে মাত্র ঘরে প্রবেশ করলেন। খাদেমের হাতে খাবার দেখে এই স্ত্রী অভিমান পেলেন। মনের কষ্ট কমাতে খাদেমের হাতে মৃদু আঘাত করলেন।

আঘাতের কারণে খাদেমের হাত থেকে পাত্রটি পড়ে গেল। খাবারগুলো ছড়িয়ে পড়ল। পাত্রটিও ভেঙ্গে গেল। রাসুল সা. এ দৃশ্য দেখে কাউকে বিদ্রুপ করেননি। নিজ হাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যাওয়া খাবারগুলো উঠালেন। ভাঙ্গা পাত্রের টুকরোগুলো একত্র করলেন। তারপর অন্য একটি ভালো পাত্র খাদেমের হাতে দিয়ে ফেরত পাঠালেন। খাদেমকে বললেন, তোমার মায়ের মর্যাদায় একটু আঘাত হেনেছে, তাই এমনটি করেছে। (বুখারী শরীফ)

কখনও বিরক্ত হতেন না

হজরত আনাস রা. বলেন, আমি ১০ বছর রাসুল সা. এর খেদমত করেছি। খেদমতের এ দীর্ঘ সময়ে রাসুল সা. আমাকে কখনও বলেননি আনাস! এ কাজটি কেনো করেছো? আনাস! এ কাজটি কেনো  করোনি? আমার কোন কাজে বিরক্ত হয়ে উফ শব্দটিও বলেন নি। -(মুসলিম শরীফ)

সবার আগে সালাম-মুসাফাহা

রাসুল সা. আগে সালাম দিতেন। মুসাফাহা করতেন। মুসাফা করে নিজে আগে হাত টেনে নিতেন না। অপরজন হাত না সরানো পর্যন্ত হাত ধরেই থাকতেন। কারো সামনে পা ছড়িয়ে বসতেন না। কোন কিছুতে হেলান দিয়ে খেতেন না।

শত্রুর সঙ্গে অমায়িক আচরণ

আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল; মুনাফিক সরদার। মৃত্যু পর্যন্ত রাসুল সা. এর সাথে শত্রুতা করেছে। জীবনের  প্রতিটি মুহূর্তে রাসুল সা.-কে কষ্ট দিয়েছে। আম্মাজান আয়েশা রা. এর উপর অপবাদ দিয়েছে। সে অপবাদ চারিদিকে ছড়িয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আয়েশা রা. সত্যতার বিষয়ে আয়াত নাজিল করেছেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বিন সালুস মারা গেলে তার ছেলে আব্দুল্লাহর অনুরোধে এ মুনাফিকের কাফনের জন্য রাসুল সা. নিজের জুব্বা খুলে দেন। রাসুল সা. নিজেই জানাজা পড়ান। (এর পরে আর কোন মুনাফিক, মুশরিকের জানাজা পড়েননি)  মৃত শত্রুর সাথে এমন উদারনীতি দেখে মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বিন সালুলের বংশের ১০০০ লোক ইসলাম কবুল করেছিল। ( তাফসীরে বুরহানুল কুরআন,সুরা কলাম)

সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ

কোন এক সফরে যাত্রা বিরতি হল। খাবার প্রস্তুত করতে হবে। ছাগল জবাই করা হলো। সাহবাগণ নিজেরা বিভিন্ন কাজ ভাগ করে নিলেন। রাসুল সা. নিজেই লাকড়ি সংগ্রহের দায়িত্ব নিলেন। নবীজির এমন সিদ্ধান্তে সাহবায়েকেরাম অবাক হলেন। নিজেরাই সব কাজ করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয়ী হলেন। কিন্তু না! রাসুল সা. বললেন, সকলের মাঝে নেতা হয়ে বসে থাকা আমি পছন্দ কির না।( তাফসীরে বুরহানুল কুরআন,সুরা কলাম)

 ব্যাক্তিগত কারণে কারো থেকে প্রতিশোধ নিতেন না

একবার খয়বারের ইহুদীরা রাসুল সা.-কে দাওয়াত করল। রাসুল সা. দাওয়াতে উপস্থিত হলেন। ইহুদীরা ষড়যন্ত্র করল। খাদ্যে বিষ মেশালো। রাসুল সা. খাদ্য মুখে দিলেন। এমন সময় আল্লাহ প্রিয় নবীকে বিষের বিষয়ে অবগতি করালেন। রাসুল সা. খাবার থেকে হাত গুটিয়ে নিলেন। ইহুদীদের ষড়যন্ত্র জেনে গেলেন। তবুও তাদের ক্ষমা করে দিলেন। কারণ রাসুল সা. ব্যাক্তিগত কারণে কারো থেকে প্রতিশোধ নেননি।( তাফসীরে বুরহানুল কুরআন,সুরা কলাম)

শত্রুকে ক্ষমা

রাসুল সা. নাজদের দিকে যাচ্ছেন। ক্লান্তি দুর করার জন্য যাত্রা বিরতি দিলেন। সাহাবাগণ বিভিন্ন গাছের নিচে বিশ্রাম নিলেন। রাসুল সা.ও একটি গাছের নিচে শুয়ে পড়লেন। তরবরিটি পাশে রাখলেন। এমন সময় দুশমন এসে হাজির। পাশে থাকা তরবারি কোষমুক্ত করে বলল, হে মুহাম্মদ এখন কে তোমাকে আমার থেকে রক্ষা কররে? রাসুল সা. বিচলিত হননি বরং স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন আল্লাহ। এ কথা শুনে দুশমনের হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল। আশপাশ থেকে সাহাবারা এসে জমা হলেন। দুশমন ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু রাসুল সা. ক্ষমা করে দিলেন। (মুসলিম শরীফ)

ধন-সম্পদের প্রতি অনীহা

রাসুল সা. ছিলেন দুঃখীদের সঙ্গী। রাসুল সা. এর কাছে অসুস্থ কেউ এলে সুস্থতা নিয়ে যেতেন। মুর্খ, জ্ঞান পাপীরা ক্ষমা এবং বেঈমানরা ইমানের দৌলত লাভ করতেন। আর অভাবি এলে ধনী হয়ে যেতেন। রাসুল সা. বলেন, ওহুদ পাহাড় পরিমান সম্পদ যদি আমার কাছে থাকে তবে তা তিন দিনের অথিক সময় থাকা আমি পছন্দ করি না। ( তাফসীরে বুরহানুল কুরআন, সুরা কলাম)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Close