তাজা খবর:
Home / breaking / অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, মার্কিন সিনেটে প্রস্তাব
অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, মার্কিন সিনেটে প্রস্তাব

অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, মার্কিন সিনেটে প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন সিনেটে একটি বাইপার্টিজান প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের পর ভারত-চীন সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অরুণাচল প্রদেশকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে দাবি করে চীন। শুধু তাই নয়, অরুণাচলকে ভারতের অংশ বলে মনে করে না বেইজিং। যে কারণে মার্কিন সিনেটরদের এই পদক্ষেপে চীন ক্ষুব্ধ হতে পারে।

গত ডিসেম্বরে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে চীন ও ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ কোয়াড জোটের সদস্যরা যেভাবে ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে, মার্কিন সিনেটের এই প্রস্তাবও সেই ধারাবাহিকতার অংশ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। ভারতও কোয়াডের অন্যতম অংশীদার।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর বিল হ্যাগার্টি এবং ডেমোক্র্যাট সিনেটর জেফ মার্কলি যৌথভাবে ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এছাড়া টেক্সাসের ডেমোক্র্যাট সিনেটর জন কর্নিনও এই প্রস্তাবের কো-স্পনসর ছিলেন।

প্রস্তাবটির শুরুতে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের সময় থেকেই গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মধ্যেকার ম্যাকম্যাহন লাইনকে দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসাবে আমেরিকা স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে।

চীন যে অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দাদের ভিসা দিতে চায় না এবং ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ বা সীমান্ত অঞ্চলে নানা ‘প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ’ নিয়ে থাকে, মার্কিন সিনেটরদের প্রস্তাবে সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের সরকারি মানচিত্রে অবশ্য পুরো অরুণাচল প্রদেশকেই তাদের দেশের ভেতরে বলে দেখানো হয়।

ওই রাজ্যের ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার পুরোটাই নিজেদের বলে মনে করে চীন।

চীন ও অরুণাচলের মধ্যকার ৮৯০ কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ম্যাকম্যাহন লাইন নামে পরিচিত, যার নামকরণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব স্যার হেনরি ম্যাকমোহনের নামে। ১৯১৪ সালে সিমলায় গ্রেট ব্রিটেন, তিব্বত ও চীনের প্রতিনিধিদের নিয়ে যে ‘সিমলা কনভেনশনে’র আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানেই স্যার হেনরি ম্যাকম্যাহনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ ভারত ও তিব্বতের এই সীমান্তরেখাটি আঁকা হয়।

কোনও পার্বত্য অঞ্চলে সীমানা নির্ধারণের জন্য যে ‘হায়েস্ট ওয়াটারশেড প্রিন্সিপল’ আছে, সেই নীতিই সিমলাতে অনুসরণ করা হয়েছিল। কিন্তু চীনের প্রতিনিধি তা মানতে রাজি হননি। এছাড়া অরুণাচলের তাওয়াং-কেও তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভেতরে বলে দেখানো হয়।

তিব্বতের কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যাওয়ারই এখতিয়ার নেই, এই যুক্তি দিয়ে সিমলার ওই সমঝোতা থেকে চীন তখনই নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল। ম্যাকম্যাহন লাইন নিয়ে বিতর্কও সেই তখন থেকেই।

পরে চীন কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে এলে তারা এই প্রশ্নে তাদের আপত্তি তীব্রতর হয়।

১৯৫৯ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে লেখেন, পূর্ব সীমান্তের তথাকথিত ম্যাকম্যাহন লাইনকে তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল) বলে মনে করে। ভারত-চীন সীমান্ত যে ‘বিতর্কিত’, ভারতও পরে সেটা মেনে নিয়েছে এবং এই বিতর্ক নিরসনের চেষ্টায় এখনও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।

এদিকে অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দারা যখন চীনের ভিসার জন্য আবেদন করেন, তখন ভারতে চীনের দূতাবাস তাদের পাসপোর্টে স্ট্যাম্প না-মেরে স্টেপল করে একটি কাগজে ভিসা দিয়ে থাকেন। ভারত বহুবার এই প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে।

অরুণাচলকে চীন নিজেদের ভাষায় ‘জাংনান’ বলে বর্ণনা করে, যা তাদের মতে দক্ষিণ তিব্বতেরই একটি অংশ। অরুণাচলের বিভিন্ন এলাকা বা স্থানকে চীনা নাম দিয়েও তারা একাধিকবার নতুন নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে, যার জবাবে ভারত বলেছে একটা জায়গার নতুন নাম অবিষ্কার করে সেই নামে ডাকলেই বাস্তবতা পাল্টে যায় না।

শীতল যুদ্ধের সময় বা তারও অনেক আগে থেকেই ভারত সোভিয়েত ব্লকের অংশ ছিল। তবে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের ইস্যুতে তারা বরাবরই মার্কিন সমর্থন পেয়ে এসেছে।

১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময়ই সমগ্র অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল ওয়াশিংটন। তবে চীন ভারতে কর্মরত বিদেশি কর্মকর্তাদের অরুণাচল প্রদেশে সফরে যাওয়াটা কখনোই পছন্দ করত না, আর ভারতে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিবিদরাও সেখানে যাওয়াটা এড়িয়ে যেতেন।

এই রীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়ে কলকাতায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল ক্রেইগ এল হল ২০১৬ সালের এপ্রিলে অরুণাচল প্রদেশে যান এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানান, অরুণাচল ভারতেরই অংশ, বিবিসিকে বলছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাও মেনন।

শুধু তাই নয়, এর ছয় মাস পর দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মা প্রথম বিদেশি কূটনীতিবিদ হিসেবে অরুণাচলের তাওয়াং ফেস্টিভ্যালে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন। রাষ্ট্রদূত পদে তার উত্তরসূরী কেনেথ জাস্টার-ও তিন বছর পর ওই একই সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগ দেন।

নিরুপমা রাওয়ের কথায়, ফলে সাম্প্রতিক অতীতে আমেরিকা বার বার বুঝিয়ে দিয়েছে অরুণাচল প্রদেশকে তারা মোটেই কোনও বিতর্কিত এলাকা বলে মনে করে না এবং ওই রাজ্যটির ওপর চীনের দাবিকেও স্বীকার করে না। বিবিসি বাংলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Close